বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুদ্রিত কয়েন: পরিমাণে শীর্ষ ৫

আপনি কি কখনো ভেবেছেন, ইতিহাসে কোন কয়েন সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় তৈরি হয়েছে? এটা কি কোনো দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহকারীর পিস? কিংবা কোনো প্রাচীন সাম্রাজ্যের স্বর্ণের কয়েন? অবাক লাগলেও, আসলে এসবের কোনোটা নয়। সবচেয়ে বেশি মুদ্রিত কয়েনগুলো সাধারণত মূল্যমানের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট, কিন্তু সংখ্যায় বীর—নিত্যদিনের লেনদেন, খুচরা টাকা এবং ভেন্ডিং মেশিনে অপরিহার্য।


চলুন, সেই ম্যাসিভলি উৎপাদিত কয়েনগুলো দেখে নিই, যেগুলো নীরবে অর্থনীতি গড়ে তুলেছে ও বিশ্বজুড়ে সংগ্রাহকদের বিমুগ্ধ করেছে।


১. মার্কিন লিংকন সেন্ট – ৫০০ বিলিয়নেরও বেশি মুদ্রিত


সংখ্যার দিক দিয়ে লিংকন পেনির সাথে কেউ প্রতিযোগিতা করতে পারে না


* প্রথম ছাড়া হয়: ১৯০৯ (আব্রাহাম লিংকনের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে)

* মুদ্রণের সংখ্যা: আনুমানিক ৫০০ বিলিয়নেরও বেশি (আরও পড়ুন: Lincoln Cent Mintages)

* মজার তথ্য: লিংকন সেন্ট এখনও উৎপাদিত হচ্ছে, যা এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘদিনের কয়েন ডিজাইন বানিয়েছে।


মূল্য কম হলেও, পেনি আমেরিকান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ। এটি বিশুদ্ধ কপার থেকে শুরু করে কপার-প্লেটেড জিঙ্কে রূপান্তরিত হয়েছে এবং নিজস্ব সাংস্কৃতিক আইকনে পরিণত হয়েছে।


২. চীনের ১ জিয়াও ও ১ ইউয়ান কয়েন – বিলিয়ন সংখ্যায় প্রচলিত


চীনের বিশাল জনসংখ্যার জন্য এমন ছোট মূল্যের কয়েনও অত্যাশ্চর্য পরিমাণে তৈরি হয়


* ১ জিয়াও (১/১০ আরএমবি) ও ১ ইউয়ান কয়েন বছরে দশ বিলিয়নেরও বেশি মুদ্রিত হয়।

* আজীবনের মোট সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে জানা কঠিন, তবে এগুলো এক বিলিয়নের বেশি মানুষ প্রতিদিন ব্যবহার করেন।


চীনে নোট ও ডিজিটাল পেমেন্টের তুলনায় কম আলোচিত হলেও, কয়েন গ্রামাঞ্চল, গণপরিবহন এবং ভেন্ডিং মেশিনে গুরুত্বপূর্ণ।


৩. সোভিয়েত ১ কপেক – সমাজতান্ত্রিক শিল্পের স্মৃতি


সোভিয়েত আমলে ১ কপেক কয়েন ছিল বাতাসের মতোই সাধারণ—এবং ততটাই অবমূল্যায়িত।


* প্রথম মুদ্রিত হয়: ১৯২৬

* আনুমানিক মোট উৎপাদন: সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির (১৯৯১) আগ পর্যন্ত দশ বিলিয়নেরও বেশি

* গঠন: প্রধানত অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ


এই ক্ষুদ্র ব্রোঞ্জের কয়েনগুলো কেন্দ্রীয় পরিকল্পিত অর্থনীতিতে অপার পরিমাণে উৎপাদিত হতো, এবং এখনও পূর্ব ইউরোপ ও সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রে পাওয়া যায়।


৪. ইউরো ১ ও ২ সেন্ট কয়েন – ২০০২ সাল থেকে বিলিয়ন সংখ্যায় তৈরি


২০০২ সালে ইউরো চালুর পর থেকে সবচেয়ে ছোট এই কয়েনগুলো সারা মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।


* মুদ্রণ হয়: সব ইউরোজোন দেশের মাধ্যমে

* ব্যবহার: দৈনন্দিন কেনাকাটায় প্রচলিত, তবে কিছু দেশে (যেমন ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস) ধীরে ধীরে তুলে দেয়া হচ্ছে

* আনুমানিক উৎপাদন: সম্মিলিতভাবে ১০০ বিলিয়ন টিরও বেশি কয়েন


সংগ্রাহকেরা কম সংখ্যায় মুদ্রিত বছর বা দেশের বিশেষ সংস্করণের খোঁজ করেন, বিশেষ করে মোনাকো বা সান মারিনোর মতো ছোট রাষ্ট্র থেকে।


দেশ, বছর ও সংস্করণ অনুযায়ী ইউরো কয়েন সহজে চেনার ও তালিকা করার জন্য ইউরো সংগ্রাহকেরা CoinDetect অ্যাপ ব্যবহার করেন, যা ছবি থেকে কয়েন চিনে দ্রুত বিস্তারিত তথ্য দেয়।


৫. ভারতের ১ রুপি ও ৫০ পয়সা কয়েন – পরিবর্তনের বাহক


ভারতের ১ রুপি কয়েন বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক ব্যবহৃত মূল্যমান।


* প্রথম চালু: ১৯৫০

* ব্যবহারকারী: ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ

* উৎপাদন: ভারতের চারটি মিন্টে (মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ, নয়ডা, কলকাতা)


ভারতের অর্থনীতি ও জনসংখ্যার ব্যাপকতা বছরের পর বছর বিলিয়ন সংখ্যায় কয়েন উৎপাদন নিশ্চিত করেছে, দেশের আনাচে-কানাচে সেগুলো ছড়িয়ে আছে।


সংগ্রাহকদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?


বেশি পরিমাণ মুদ্রিত কয়েন যতই সাধারণ হোক না কেন, এতে থাকে ঐতিহাসিক, নকশাগত ও সাংস্কৃতিক মূল্য:


* মিন্ট মার্ক ও ত্রুটি: বেশ কিছু মূল্যবান কয়েন প্রাথমিকভাবে সাধারণ মুদ্রা ছিল—পরে কোনো ভুলে সেগুলো দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠে।

* নকশা পরিবর্তন: সাধারণ কয়েনে প্রায়ই সূক্ষ্ম নকশাগত পরিবর্তন হয়, যা সংগ্রাহকদের জন্য আকর্ষণীয়।

* বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি: লিংকন সেন্ট বা ১ রুপির মতো কয়েন যুগের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন প্রতিফলিত করে।


চূড়ান্ত ভাবনা


পরেরবার যখন হাতে একটি সাধারণ পয়সা বা একটি ঘষা ১ রুপি থাকবে, মনে রাখবেন—আপনি ইতিহাসের এমন একটি অংশ ধরে আছেন, যা বিলিয়ন মানুষের সঙ্গী। সংগ্রাহকদের জন্য, সবচেয়ে সাধারণ কয়েনও খুলে দিতে পারে গল্প, রহস্য ও গুপ্ত দুষ্প্রাপ্যতার জানালা।


তাই আপনার কয়েনের জার খুলে ফেলুন, Coinoscope অ্যাপ চালু করুন, আর দেখুন—হয়ত আপনার সামনে থাকা সাধারণ কয়েনটিরও অসাধারণ কোনো গল্প লুকিয়ে আছে।

এখনই অ্যাপটি ডাউনলোড করুন!

Android বা iPhone-এ Coinoscope অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করুন এবং কয়েন শনাক্ত করতে শুরু করুন!